রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
এস এম মিজান, গৌরনদী (বরিশাল)॥
চিকিৎসকের অভাবে বরিশালের গৌরনদী ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে প্রায় দুই বছর যাবত সিজারিয়ান অপারেশন ও সাধারণ চিকিৎসা সেবা বন্ধ রয়েছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পরেছেন এলাকার দরিদ্র পরিবারের প্রসূতি মায়েরা। এছাড়াও দীর্ঘদিন যাবত সিজার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অপারেশন থিয়েটারের মূল্যেবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রটির অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ডাঃ ফরিদুজ্জামান চলতি বছরের ১৮ মার্চ এখান থেকে বরিশাল শহরে বদলি হয়ে যান। এরপরও সপ্তাহে দুইদিন তার কেন্দ্রটিতে দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও তিনি কেন্দ্রটিতে আসছেন না। অপরদিকে ২০২০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ডেপুটেশনে দায়িত্ব পালনকারী এনেসথেশিয়ার ডাঃ আনোয়ার হোসেন অন্যত্র বদলি হয়ে যান। সেই থেকে প্রায় দুই বছর যাবত কেন্দ্রটিতে সিজারিয়ান অপারেশন ও রোগীদের চিকিৎসা সেবা বন্ধ রয়েছে। ফলে এখানে রোগী আসলেও চিকিৎসকের অভাবে সিজারিয়ান অপারেশন ও সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা।
সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০০২ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা নয় বছরের অধিক সময়কাল কেন্দ্রটিতে সিজারিয়ান অপারেশন চালু ছিলো। ২০১১ সালে তৎকালীণ অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক বদলী হয়ে গেলে সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে এনেসথেশিয়ার চিকিৎসক আনোয়ার হোসেন কেন্দ্রটিতে যোগদান করেন। ফলে ২০১৮-১৯ সালে ১৬ টি সিজারিয়ান অপারেশন হয় কেন্দ্রটিতে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, যখন সিজার অপারেশন চালু ছিলো তখন মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রের কিছু অসাধু কর্মচারী বেসরকারি ক্লিনিক মালিকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কেন্দ্রটিতে রোগী ভর্তি হতে নিরুৎসাহিত করতো। এমনকি কেন্দ্রের মধ্যে ডাক্তারদের থাকার জন্য আবাসিক ভবন থাকলেও বিভিন্ন অজুহাতে ডাক্তাররা আবাসিক ভবনে থাকতেন না।
তারা আরও জানান, একজন প্রসূতি মায়ের সিজারিয়ান অপারেশনে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। যা একটি দরিদ্র পরিবারের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। কেন্দ্রটিতে পূনরায় সিজারিয়ান অপারেশন চালু হলে কম খরচে দরিদ্র পরিবারের প্রসূতি মায়েরা সিজারিয়ান করাতে পারতো।
কেন্দ্রের দায়ী নার্স রেহানা আক্তার জেবু জানান, কেন্দ্রে রোগী আসলেও বহিরাগত কিছু লোক কেন্দ্রের দূর্নাম করে। ফলে এখানে রোগী আসতে চায় না। কেন্দ্রের এফডব্লিউভি ফাতেমাতুজ জোহরা জানান, কেন্দ্রটিতে ফ্যামিলি প্লানিংয়ের সেবা কার্যক্রম চলমান আছে। মেডিকেল অফিসার না থাকায় চিকিৎসা সেবা দেয়া যাচ্ছেনা। তিনি আরও জানান, মেডিকেল অফিসার থাকলে কেন্দ্রটি থেকে শতভাগ সেবা সম্ভব হবে।
বুধবার বিকেলে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস জানান, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটিতে সিজার অপারেশন ও নরমাল ডেলিভারি না হওয়ার খবর জানতে পেরে ইতিমধ্যে কেন্দ্রটি পরিদর্শন করা হয়েছে। শীগ্রই একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে দ্রুতভাবে কেন্দ্রটি জনগনের সেবার জন্য উপযোগী করে তোলার জন্য অনুরোধ জানানো হবে।